সোমবার, ৫ আগস্ট, ২০১৩

পবিত্র লাইলাতুল কদর বা মহিমান্বিত রজনীর ফযিলত, তাৎপর্য ও করনীয় ।


দয়াময় মেহেরবান আল্লাহর নামে শুরু করছি । আল্লাহ রাব্বুল লামীন লাইলাতুল কদরের রাতটিকে এক বিশেষ শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদা দিয়েছেন আল-কুরআনে এ রাতের গুরুত্ব ও প্রশংসা সম্বলিত একটি পূর্ণাঙ্গ সূরা রয়েছে
إِنَّا أَنزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةِ الْقَدْرِ
وَمَا أَدْرَاكَ مَا لَيْلَةُ الْقَدْرِ
لَيْلَةُ الْقَدْرِ خَيْرٌ مِّنْ أَلْفِ شَهْرٍ
تَنَزَّلُ الْمَلَائِكَةُ وَالرُّوحُ فِيهَا بِإِذْنِ رَبِّهِم مِّن كُلِّ أَمْرٍ
سَلَامٌ هِيَ حَتَّى مَطْلَعِ الْفَجْرِ
নিশ্চয়ই আমি এটিকে (আল-কুরআন) কদরের রাতে অবতীর্ণ করেছি
তুমি কি জানো কদরের রাতটি কি?
কদরের রাত হলও হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ
ফেরেশতারা ও রূহ (হজরত জিবরাঈল আ:) এই রাতে তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে সব সিদ্ধান্ত নিয়ে অবতীর্ণ হয়;
সেই রাতটি পুরোপুরি শান্তি ও নিরাপত্তার - ভোর হওয়া পর্যন্ত

সূরা আল-কদর
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবী রাদিয়াল্লাহু আনহুম এই মহিমান্বিত রাতকে উপলক্ষ করে বিশেষভাবে ইবাদাত-বন্দেগীর উদ্দেশ্যে ব্যাপক আয়োজন ও প্রস্তুতি নিয়েছেনকরুণাময় আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের অশেষ-অসীম রহমত ও বরকতে পরিপূর্ণ এ রাতের সন্ধানে তাঁরা পরিবারের সবাইকে নিয়ে মাহে রমাদানের শেষ দশদিনে বলতে গেলে দুনিয়াবী সব কাজকর্ম থেকে বিরতি নিয়ে বিভিন্ন ইবাদাতে মশগুল থাকতেন

হযরত আবু হুরাইরা রা: থেকে বর্ণিতনবী করীম সা: বলেছেন: যে কেউ ঈমানের সাথে এবং সওয়াবের আশায় রমাদানে সিয়াম পালন করলো, তার পূর্ববর্তী সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হবেআর যে কেউ ঈমানের সাথে এবং সওয়াবের আশায় কদরের রাতে (ইবাদাতে) দাঁড়ালো, তার আগেকার সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে
সহীহ আল-বুখারী

হযরত আয়েশা রা: থেকে বর্ণিতরাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন: তোমরা লাইলাতুল কদরকে রমাদানের শেষ দশদিনের বেজোড় রাতে তালাশ করো
সহীহ আল-বুখারী

হযরত আয়েশা রা: বর্ণনা করেছেন, যখন (রমাদানের) শেষ দশদিন এসে যেতো, তখন নবী করীম সা: তাঁর পরনের কাপড় শক্ত করে বেঁধে নিতেন (অর্থাৎ দৃঢ়তার সাথে প্রস্তুতি নিতেন), রাত জাগতেন এবং পরিবারের লোকদেরকেও জাগিয়ে দিতেন
সহীহ আল-বুখারী

হযরত আয়েশা রা: থেকে বর্ণিতনবী করীম সা: রমাদানের শেষ দশ দিনে ইতেকাফে (seclusion in a mosque for worship) বসতেন যতক্ষণ না আল্লাহ তাঁকে উঠিয়ে নিলেনতারপর তাঁর স্ত্রীরাও (শেষ দশকে) ইতেকাফ করতেন
সহীহ আল-বুখারী

হযরত আবু হুরাইরা রা: থেকে বর্ণিততিনি বলেন: নবী করীম সা: প্রতি রমাদানে দশদিন ইতেকাফ করতেনকিন্তু যে বছর তাঁর ইন্তেকাল হলো, সে বছর তিনি বিশ দিন ইতেকাফ করেছিলেন
সহীহ আল-বুখারী

লাইলাতুল কদরের সন্ধানে রমাদানের শেষ দশ দিনে আমরা যা করতে পারি:
১. রমাদানের শেষ দশ দিনে আল্লাহর উদ্দেশ্যে পার্থিব কাজকর্ম থেকে অবকাশ/ছুটি নেয়া (take a vacation for Allah)দশ দিন সম্ভব না হলে যতদিন পারা যায়

২. ইবাদাতের পরিকল্পনা, প্রস্তুতি ও তা বাস্তবে রূপ দেয়া

৩. পরিবারের সবাইকে নিয়ে এর গুরুত্ব আলোচনা করা ও তাদেরকেও এই বিশেষ ইবাদাতের অনুভূতি ও কার্যক্রমে সম্পৃক্ত (share) করা

৪. যে কদিন বা সময়ের জন্যই সম্ভব হয় পুরুষদের নিজ এলাকার মসজিদে এবং মহিলাদের নিজেদের ঘরে ইতেকাফ করার চেষ্টা করা
নবী করীম সা: বলেছেন: আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে এক দিনের ইতেকাফের জন্য আল্লাহ তালা ইতেকাফকারী এবং জাহান্নামের আগুনের মাঝখানে এমন তিনটি খাদকে (trenches) সম্প্রসারিত করেন যাদের প্রত্যেকটির বিস্তৃতি আসমান ও যমীনের দূরত্বের চেয়েও প্রশস্ত
মুসনাদে আহমাদ

৫. বেশী বেশী কুরআন তিলাওয়াত করাবিশেষ করে সালাতে আমরা যেসব সূরা বা আয়াত পড়ে থাকি সেগুলোর অর্থসহ মর্মার্থ জানার চেষ্টা করাএটি সালাতে মনোযোগী হতে সাহায্য করে

৬. বেশী করে সালাত আদায় করামসজিদে জামাআতে নিয়মিত ফরয ও তারাবীহ আদায়ের পাশাপাশি বেশী করে নফল সালাত আদায় করা এক্ষেত্রে তাহাজ্জুদ ও সালাতুত তাসবিহ আদায়ের জোর চেষ্টা করা

৭. যিকির, তওবা ও ইসতেগ্‌ফার করাএলক্ষ্যে সঠিক পদ্ধতিতে আল্লাহকে বেশী করে স্মরণ করা, নবী করীম সা:এর প্রতি দরুদ পাঠ এবং আমাদের অপরাধগুলোর জন্য আল্লাহর কাছে তওবা করা

৮. বেশী করে দুআ (Asking from Allah) করানিজের এবং উম্মাহর যত অভাব, যত সংকট রয়েছে সব কিছুর জন্য এবং আখিরাতে মুক্তির জন্য বিশেষ করে কুরআনে বর্ণিত দুআ গুলো করার চেষ্টা করারমাদান দুআ কবুলের সময়
হযরত আয়েশা রা: বর্ণনা করেন, আমি রাসূলুল্লাহ সা:কে জিজ্ঞেস করলাম: হে আল্লাহর রাসূল সা:! আমি যদি লাইলাতুল কদর পাই তাহলে আমি কি দুআ করবো? রাসূল সা: জবাব দিলেন: আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুঊন তুহিব্বুল আফ্‌ওয়া ফাআফু আন্না’ (হে আল্লাহ! তুমিই অপরাধ ক্ষমা করো, আর ক্ষমা করাকে তুমি খুবই পছন্দ করো, কাজেই তুমি আমাকে মাফ করে দাও)
মুসনাদে আহমাদ, সুনানে ইবনে মাজাহ, আল-জামে আত-তিরমিযী

৯. আল্লাহর কাছ থেকে পাওয়ার জন্য নিজের প্রয়োজনীয় সাহায্যে চাওয়ার তালিকা তৈরি করাআত্ম-সমালোচনা ও বিশ্লেষণ করে নিজেকে জিজ্ঞেস করা - সত্যিই আমি আল্লাহর কাছে কি চাইতা ছোট-বড় যাই হোক, দুনিয়া ও আখিরাতের যে কোনো ব্যাপারেই সংশ্লিষ্ট হোকমহান আল্লাহ তালা আমাদের পক্ষ থেকে তাঁর কাছে চাওয়াকে খুবই পছন্দ করেনতালিকা তৈরি হয়ে গেলে সেগুলো সালাত আদায়ের সময় সিজদাহরত অবস্থায় বিনয় ও কাকুতি-মিনতির সাথে তাঁর কাছে বারবার চাওয়া

১০. দুআ কবুলের শ্রেষ্ঠ সময় হলো শেষ রাত
হযরত আবু হুরাইরা রা: বর্ণন করেনরাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন: যখন রাতের তিন ভাগের একভাগ বাকী থাকে তখন আমাদের আল্লাহ সুবহানাহূ ওয়াতালা আসমান (তাঁর আরশ) থেকে পৃথিবীর প্রথম আসমানে নেমে আসেন এবং বলতে থাকেন: কে আমার কাছে প্রার্থনা করে - আমি তার প্রার্থনা কবুল করবোকে আমার কাছে সাহায্য চায় - আমি তাকে সাহায্য করবো, কে আমার কাছে ক্ষমা চায় - আমি তাকে মাফ করে দিবো
সহীহ আল-বুখারী ও সহীহ মুসলিম

১১. রাতে একটানা একইভাবে ইবাদাত না করে বিরতি নিয়ে বিভিন্ন রকমের ইবাদাতে সময় কাটানো যেতে পারেএতে ইবাদাতে বেশী করে মনোযোগ ও তৃপ্তি লাভ করা যায়
দয়াময় আল্লাহ আমাদেরকে এই রমাদানে আমাদের সবার জীবনের সব গুনাহগুলো ক্ষমা করে দিন, নিষ্পাপের মতো যেন আমরা ঈদের সালাতে সবাই এ অবস্থায় হাজির দিতে পারি যে, ‘তিনি আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট, আর আমরাও তার প্রতিআমীন!



হাসান ইমতি

অকপট  
সত্য যেথা দ্বিধাশূন্য, মুক্ত যেথা বাক ।  

থ্যসুত্রঃ ইন্টারনেট । 


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন