শুক্রবার, ২ আগস্ট, ২০১৩

রমযানে পরিবারের ঘরণী বা নারী সদস্যদের ভূমিকা মূল্যায়ন ।



রমযানে ঘরের প্রয়োজনীয় সম্মিলিত আয়োজনগুলোতে পরিবারগুলোর ঘরণী বা নারী সদস্যরাই সবচেয়ে বেশি শ্রম ও সময় দিয়ে থাকেনসংসারের কঠিন কাজগুলোর পাশাপাশি ইফতার, সাহরী, রাতের খাবারের প্রস্ত্ততিসহ পরিবারের রোযাদার সদস্যদের নানা চাহিদা মেটানোর পেছনে অকাতরে নিজেদের নিয়োজিত রাখেনআবার তারা রোযাও রাখেনফরয, ওয়াজিব, নফল ইবাদতে নিমগ্ন হওয়ার আবশ্যকতা ও আগ্রহ তাদের মাঝেও থাকেরোযাজনিত অবসাদ ও ক্লান্তিও তারা বোধ করেনকিন্তু পরিবারের পুরুষ-সদস্যরা অনেক সময়ই পরিবারের নারীদের সামর্থ ও সীমাবদ্ধতার এই দিকটির প্রতি চোখ রাখেন নাচাহিদা অনুযায়ী কিংবা মনমতো কিছু একটার ঘাটতি ঘটে গেলে তারা বিরক্তি বা ক্ষোভ লুকিয়ে রাখতে পারেন নাএটা রমযান ও রোযার সংযমনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যশীল নয়কখনো কখনো এসব ক্ষেত্রে মানসিক জুলুমের ঘটনাও ঘটে যায়-যেটা রমযান-অ-রমযান কোনো অবস্থাতেই অনুমোদিত নয়

এজন্য এ বিষয়টির প্রতি পূর্ণ সতর্কতা ও সর্বোচ্চ বিবেচনা বজায় রাখা রোযাদার পরিবারের পুরুষ সদস্যদের দায়িত্বএ ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয়ের প্রতি গুরুত্ব দিলে সমস্যার মাত্রা কমে যাবে বলে আশা করা যেতে পারেএক. রমযানে নারীদের ঘরোয়া আয়োজনগত সেবার মূল্যায়ন করাকারো পক্ষ থেকে উপকৃত হলে মানুষ যেমন তাকে কথায়-আচরণে খুশি করার চেষ্টা করে, রমযানে ঘরের নারীদের প্রতি তেমন সৌজন্য ও সদাচার প্রকাশ করা উচিতদুই. সাহরী-ইফতার ও অন্য যে কোনো আয়োজন এবং সেবায় কখনো কখনো মন ও রুচিমাফিক কিছু না পেলে সয়ে যাওয়া ও ধৈর্য্য ধরাএ কারণে ঘরণীর প্রতি কোনো রকম তিক্ত আচরণ করা থেকে পুরোপুরি বিরত থাকা উচিততিন. নিজে রোযাদার হয়েও ঘরণী যে শ্রম ও সময় দিচ্ছেন, সেক্ষেত্রে তাকে সহযোগিতা করার ব্যবস্থা নেওয়াএটা প্রত্যক্ষভাবে নিজে হাত লাগিয়েও করা যায়আবার সহযোগী কাজের মানুষের ব্যবস্থা করেও তার কষ্ট কমানোর উদ্যোগ নেওয়া যায়সময়, পরিস্থিতি ও সুবিধা অনুযায়ী সহযোগিতার ধরণটা ঠিক করে নেওয়া যেতে পারেচার. রমযানে শরয়ী প্রয়োজন ছাড়া নফল-মুস্তাহাব পর্যায়ের সেবার জন্য নারীদের ওপর কোনো কিছু চাপিয়ে না দেওয়াযেমন পরিবারের কর্তার মনে হল, আজ কয়েকজনকে দাওয়াত করে ইফতারের বিশেষ মেহমানদারি করবেনএজন্য তিনি ঘরণীর সুবিধা-অসুবিধা, ক্লান্তি ও আয়োজনের শ্রম-কোনোদিকেই খেয়াল করলেন নাতার সঙ্গে আলোচনা করে আগেই তাকে মানসিকভাবে তৈরি করা সম্ভব হল নাতাকে শুধু জানিয়ে দিলেন, এতজন মেহমান আসছেন, এই এই আয়োজন করতে হবেমেহমানদারির এ পদ্ধতি ঠিক নয়রমযানে ইফতার করানো অনেক ছওয়াবের কাজএটা স্বতন্ত্র বিষয়ঘরণীর ওপর চাপিয়ে না দিয়ে আগ্রহ ও উৎসাহের সঙ্গে সেটা করতে উদ্বুদ্ধ করা এটিও স্বতন্ত্র বিষয়দুটির মাঝে সমন্বয় করেই এ ধরনের পুন্যের উপলক্ষগুলো সমাধা করতে হবেকিংবা অন্য উপায়ও তো খোলা আছেবাইরে থেকে ইফতার কিনে এনেও এটা করা যায়আবার ঘটনা যদি এমন হয় যে, দাওয়াত কিংবা বিশেষ মেহমানদারির কোনো ব্যাপার নেই, মেহমান নিজেই বাসায় চলে এসেছেন, সেক্ষেত্রে পারিবারিক দায়িত্বের মধ্যেইে সেটি পড়ে যায়তখন আয়োজন নিয়ে অস্থিরতারও কিছু নেইযা আছে এবং যতটুকু করা গেল, তাতেই ইফতার করানোর হক আদায় হয়ে যায়

ঘরণীর প্রতি, পরিবারের নারী সদস্যদের প্রতি সদাচার জীবনের প্রতিটি মুহূর্তের দাবিরমযানুল মুবারকে এ দাবির জোর ও প্রাসঙ্গিকতা অনেক বেশিসেজন্য রমযানে এ বিষয়টির প্রতি সবার বিশেষ মনোযোগ থাকা দরকার। 

হাসান ইমতি

অকপট  
সত্য যেথা দ্বিধাশূন্য, মুক্ত যেথা বাক ।  

আলোচকঃ মাওলানা শরীফ মুহাম্মাদ

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন