বুধবার, ৩ জুলাই, ২০১৩

খোশ আমদেদ মাহে রমজান - কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা ।

আসসালামু আলাইকুম, খোশ আমদেদ মাহে রমজান,মহান আল্লাহর রহমতে সবাই ভালো আছেন, ভালো থাকেন সে আশাই করি।  সেইসাথে মহান আল্লাহর  শুকরিয়া আদায় করি, যিনি আমাদেরকে আবারও আরেকটি পবিত্র রামাদনুল মোবারাকের সিয়াম পালন করার তাওফিক দান করেছেন।
রোজা ফারসি শব্দ। এর অর্থ হচ্ছে দিন। যেহেতু এই আমলটি দিনের শুরু থেকে শেষাংশ পর্যন্ত পালন করা হয় তাই একে রোজা বলা হয়।
আর আরবিতে এর নাম সাওম। যার শাব্দিক অর্থ কোনো কাজ থেকে বিরত থাকা। শরয়ী পরিভাষায় সুবেহ সাদিকের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশে পানাহার ও স্ত্রী সহবাস থেকে বিরত থাকাকে সাওম বা রোজা বলা হয়। দ্বিতীয় হিজরীর শাবান মাসে আরবি বর্ষপঞ্জিকার নবম মাস রমজানে মুসলমানদের জন্য রোজা ফরজ হয়। আল্লাহর নবী (সা.) ওই সালের রমজান থেকে মোট ৯ বার রমজানের রোজা পালন করেন।
ইসলামের রোকনগুলোর মধ্যে রমজান মাসের রোজার স্থান হলো তৃতীয়- যা প্রত্যেক সুস্থ মস্তিষ্ক সম্পন্ন প্রাপ্তবয়স্ক মুসলমানের ওপর ফরজ। এর অস্বীকারকারী কাফের এবং বিনা কারণে পরিত্যাগকারী ফাসেক।

রোজা ও ইফতারের সময়সূচী ২০১৩ এখানে থেকে সংগ্রহ করতে পারেনঃ রোজা ও ইফতারের সময়সূচী ২০১৩

রোজার নিয়ত:
রমজান মাসে রোজার নিয়ত বা অন্তরে ইচ্ছা বা আগ্রহকে দৃঢ় করে নেওয়া জরুরি। মুখে উচ্চারণ করে নিয়ত করা জরুরি নয়। যদি কেউ মুখে বা মনে মনে রোজার নিয়ত না করে বা রোজার রাখার জন্য মনস্থির না করে পুরো দিন পানাহার থেকে বিরত থাকে তবে তা রোজা বলে গণ্য হবে না।
আরবি ভাষায় রোজার নিয়ত- নাওয়াইতু আন আছুমা গাদাম মিন শাহরি রামাদানাল মুবারাকি ফারদাল্লাকা ইয়া আল্লাহু ফাতাক্কাব্বাল মিন্নি ইন্নাকা আনতাস সামীউল আলীম। এর বাংলা অর্থ-(হে আল্লাহ) আপনার সন্তুষ্টির জন্য আগামীকাল রমজানের ফরজ রোজা রাখার নিয়ত করছি। আমার তরফ থেকে আপনি তা কবুল করুন। নিশ্চয়ই আপনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞাত।
অথবা নাওয়াইতু আন আছুমা লিল্লাহি তাআলা.. এটুকু বললও হবে। আবার বাংলায় আমি আল্লাহর জন্য রোজা রাখার নিয়ত করছি বললেও কোনো ক্ষতি নেই।

আরবি ভাষায় ইফতারের দোয়া- আল্লাহুম্মা লাকা সুমতু ওয়া আলাইকা তাওয়াক্কালতু ওয়া আলা রিজকিকা আফতারতু বিরাহমাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমীন। এর বাংলা অর্থ- (হে আল্লাহ) আমি তোমারই সন্তুষ্টির জন্য ও তোমারই ওপর ভরসা করে রোজা রেখেছিলাম এবং হে রাহমানির রাহিম তোমারই অনুগ্রহ দ্বারা ইফতার করছি।

যেসব কারণে রোজা নষ্ট হয়:
.    নাক বা কানে ওষুধ প্রবেশ করালে।
২.    ইচ্ছাকৃতভাবে মুখ ভরে বমি করলে।
৩.    কুলি করার সময় গলার মধ্যে পানি চলে গেলে।
৪.    নারী স্পর্শ বা এ সংক্রান্ত কোনো কারণে বীর্য বের হলে।
৫.    খাদ্য বা খাদ্য হিসেবে গণ্য নয় এমন কোনো বস্তু গিলে ফেললে।
৬.    আগরবাতি ইচ্ছা করে গলা বা নাকের মধ্যে প্রবেশ করালে।
৭.    বিড়ি সিগারেট পান করলে।
৮.    ভুলে খেয়ে ফেলার পর ইচ্ছা করে পুনরায় খাবার খেলে।
৯.    সুবেহ সাদিকের পর খাবার খেলে।
১০. বুঝে হোক বা না বুঝে সূর্য ডোবার আগে ইফতার করলে।
১১.  ইচ্ছা করে স্ত্রী সহবাস করলে।

যেসব কারণে রোজা মাকরুহ হয়:
১.    বিনা কারণে জিনিস চিবিয়ে বা লবণ কিংবা কোনো বস্তুর স্বাদ গ্রহণ করা। যেমন টুথপেস্ট, মাজন,
       কয়লা ইত্যাদি দিয়ে দাঁত মাজা।
২.    গোসল ফরজ অবস্থায় সারাদিন গোসল না করে থাকা।
৩.    শরীরের কোথাও শিঙ্গা ব্যবহার করা বা রক্তদান করা।
৪.    পরনিন্দা করা।
৫.    ঝগড়া করা।
৬.    রোজাদার নারী ঠোঁটে রঙিন কোনো বস্তু লাগালে যা মুখের ভেতর চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
৭.    রোজা অবস্থায় দাঁত উঠানো বা  দাঁতে ওষুধ ব্যবহার করা, তবে একান্ত প্রয়োজনে তা জায়েয।

যেসব কারণে রোজা ভঙ্গ হয় না কিংবা মাকরুহও হয় না:
১.    মিসওয়াক করলে।
২.    মাথায় বা শরীরে তেল লাগালে।
৩.    চোখে ওষুধ বা সুরমা লাগালে।
৪.    গরমের কারণে পিপাসায় গোসল করলে।
৫.    সুগন্ধি ব্যবহার করলে।
৬.    ইনজেকশন বা টিকা দিলে।
৭.    ভুলক্রমে পানাহার করলে
৮.    ইচ্ছা ছাড়াই ধুলাবালি বা মাছি ইত্যাদি প্রবেশ করলে।
৯.    কানে পানি প্রবেশ করলে
১০.  দাঁতের গোড়া থেকে রক্ত বের হলে।

যেসব কারণে রোজা না রাখলেও ক্ষতি নেই:
১.    কোনো অসুখের কারণে রোযা রাখার শক্তি হারিয়ে ফেললে অথবা অসুখ বৃদ্ধির ভয় হলে। তবে পরে
       তা কাযা করতে হবে।
২.    গর্ভবতী স্ত্রী লোকের সন্তান বা নিজের প্রাণ নাশের আশঙ্কা হলে রোজা ভঙ্গ করা বৈধ তবে কাযা করে
        দিতে হবে।
৩.    যেসব স্ত্রী লোক নিজের বা অপরের সন্তানকে দুধ পান করান রোজা রাখার ফলে যদি দুধ না আসে
        তবে রোজা না রাখার  অনুমতি আছে কিন্তু পরে কাযা আদায় করতে হবে।
৪.    শরিয়তসম্মত মুসাফির অবস্থায় রোযা না রাখার অনুমতি আছে। তবে রাখাই উত্তম।
৫.    কেউ হত্যার হুমকি দিলে রোযা ভঙ্গের অনুমতি আছে। পরে এর কাযা করতে হবে।
৬.    কোনো রোগীর ক্ষুধা বা পিপাসা এমন পর্যায়ে চলে গেল এবং কোনো দ্বীনদার মুসলিম চিকিৎসকের
         মতে রোজা ভঙ্গ না করলে তখন মৃত্যুর আশঙ্কা আছে। তবে রোযা ভঙ্গ করা ওয়াজিব। পরে তা কাযা
        করতে হবে।
৭.    হায়েজ-নেফাসগ্রস্ত (বিশেষ সময়ে) নারীদের জন্য রোজা রাখা জায়েজ নয়। পরবর্তীতে কাযা করতে
        হবে।

ধন্যবাদান্তে, 

হাসান ইমতি

অকপট  
সত্য যেথা দ্বিধাশূন্য, মুক্ত যেথা বাক ।  

থ্যসুত্রঃ ইন্টারনেট ।  

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন