হ্যাকিং কি ও কেন?
সাধারণত
হ্যাকিং বলতে একটি বিশেষ সাইবার অপরাধ
সংক্রান্ত প্রক্রিয়াকে বোঝান হয় যার মাধ্যমে কোন অসৎ উদেশ্য সাধন যেমন গুপ্তচর
বৃত্তি, ব্যাক্তিগত
তথ্য চুরি বা কম্পিউটার
ও কম্পিউটার নেটওয়ার্কের ক্ষতিসাধন ইত্যাদির নিমিত্তে অবৈধভাবে কোনো কম্পিউটার বা
কম্পিউটার নেটওয়ার্কে প্রবেশ করে করা হয় । যারা
এ হ্যাকিং করে তারা হচ্ছে হ্যাকার। এসব কথা
কমবেশি আমরা সবাই জানি। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে হ্যাকিং বলতে শুধু
কোনো ওয়েবসাইট
হ্যাকিং, কম্পিউটার বা কম্পিউটার
নেটওয়ার্ক হ্যাক করা বোঝায় না, এর আওতা আরও অনেক বিস্তৃত। হ্যাকিং অনেক ধরনের হতে পারে। মোবাইল
ফোন, ল্যান্ড
ফোন, গাড়ি
ট্র্যাকিং, বিভিন্ন
ইলেক্ট্রনিক্স ও ডিজিটাল যন্ত্র বৈধ অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে তাও হ্যাকিংয়ের
আওতায়
পড়ে।
হ্যাকাররা
সাধারণত এসব ইলেক্ট্রনিক্স যন্ত্রের ক্রুটি বা নিরাপত্তা জনিত দুর্বলতা বের করে তা কাজে
লাগিয়ে হ্যাক করে অবৈধভাবে সুবিধা গ্রহণ করে থাকে ।
হাকিংয়ের ইতিহাস
১৯৬০
সালে এআইটি ল্যাবের কতিপয় ছাত্র একটি প্রোগ্রামের কিছু শর্টকার্ট বের করেন তারপর
থেকে তখন তাদের হ্যাকার বলা হতো । এরপর ১৯৭০
সালে
জন ড্রেপার টেলিফোন সিস্টেম হ্যাক করে বিনামূল্যে প্রচুর টেলিফোন করেন আর তখন
থেকেই মূলত হ্যাকিং ব্যাপারটা ব্যাপক আকারে পরিচিতি পায় এবং ব্যপকভাবে
ছড়িয়ে পড়ে।হ্যাকিংয়ের জন্য তাকে Captain
Crunch নামে
উপাধি দেয়া হয়েছিল। তবে হ্যাকিংয়ে উৎসাহ দেয়ার জন্য ১৯৮৩
সালে মুক্তিপ্রাপ্ত War Games মুভিটিকে অনেকেই দায়ী করেন। ১৯৮৩ সালে ৪১৪ নামে ছয়জন টিনএজারকে আমেরিকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের
সিস্টেম অকেজো করে দেয় তবে তারা খুব তাড়াতাড়িই পুলিশের হাতে ধরা পডে। ১৯৮৪ সালে প্রথমবারের
মতো প্রকাশ হয় হ্যাকারদের
ম্যাগাজিন ২৬০০। ১৯৮৬
সালে আমেরিকায় হ্যাকিংয়ের বিরুদ্ধে আইন করা হয়। ১৯৮৭
সালে হার্বাট জিন নামের ১৭ বছর বয়সী হাইস্কুল ছাত্রকে ১৯৮৬ সালের হ্যাকিং আইনে
গ্রেপ্তার করা হয় এটিঅ্যান্ডটি ল্যাবের তথ্য চুরির অভিযোগে। ১৯৮৮
সালে ৬০০০ নেটওয়ার্ককে থামিয়ে দেয় তবে তিনি খুব দ্রুত গ্রেপ্তার হন
এবং তার ৩ বছরের জেল সঙ্গে ১০০০০ ডলার জরিমানা করা হয়। ১৯৯৩
সালে যুক্তরাষ্ট্রের লসএঞ্জেলেস রেডিও স্টেশন প্রতিযোগিতার আয়োজন
করে যেখানে বলা হয় ১০২তম ফোনকারীকে তারা গাড়ি পুরস্কার দেবে। ফেভিন পলসেন রেডিও স্টেশনের টেলিফোন সিস্টেমে
হ্যাক করে এমন ব্যবস্থা করেন যাতে তার ফোন ছাড়া অন্য কারো ফোন যেন রিসিভ না হয়। ফলাফল তিনি ঠিকই গাড়ি জিতে নেন। কিন্তু
পরে
গ্রেপ্তার হয়ে খাটতে হয় ৫১ মাসের জেল। ১৯৯৪ সালে ১৬
বছর বয়সী হড সে প্রায় ১০০ কম্পিউটারের
সিকিউরিটি সিস্টেম ভেঙে ফেলে যার মধ্যে নাসা, কোরিয়ান
পারমাণবিক সংস্থাসহ বিভিন্ন গুরম্নত্বপূর্ণ সংস্থার নেটওয়ার্ক ছিল। এছাড়া হ্যাকিং জগতে অন্যতম বড় ব্যাংক ডাকাতি করেন
রাশিয়ান গণিতবিদ ভ্লাদিমির লেভিন। তিনি
নিউইয়র্কের সিটি ব্যাংক থেকে কাস্টমারদের ১০ মিলিয়ন ডলার নিজের একাউন্টে ট্রান্সফার
করেন। ১৯৯৫ সালে তিনি ইংল্যান্ডের হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার
হন এবং তিন বছর জেল খাটেন। সব টাকাই ফেরত পাওয়া যায় তবে ৪০ লাখ ডলার পাওয়া যায়নি।
সেই
১৯৬০ থেকে শুরু করে আজ ২০১৩ অবধি প্রযুক্তির ক্রমাগত উন্নতির সাথে সাথে হ্যাকাররাও
করে বশে নেই। বের হয়েছে হ্যাকিঙের নিত্য নতুন কলা কৌশল।
হ্যাকিংয়ের ফাঁদ পাতা ভুবনে বুঝে শুনে পা ফেলুন
মাছ
ধরার টোপের মতোই ইন্টারনেটে টোপ ফেলে হ্যাকাররা। ‘আপনি
পুরষ্কার জিতেছেন’ কিংবা ‘ফ্রি অফার’-এর নামে স্পাম মেইল সম্পর্কে বেশ
পরিচিত
ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা। এতে
হ্যাকাররা খুব সহজেই নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে আপনার পিসি। এমনকি
ওয়েবে আপনার স্বাচ্ছন্দ্য বিচরণে আড়িপেতে হ্যাক করতে পারে
আপনার মেইলের সব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য কিংবা হাতিয়ে নিতে পারে আপনার ওয়েবসাইটের
নিয়ন্ত্রণ। হ্যাকারদের ব্যবহৃত বেশ
কয়েকটি টুলসের কথা জানিয়েছেন ইউনিভার্সিটি অফ সুরিস এর ডিপার্টমেন্ট অফ
কম্পিউটিং -এর ভিজিটিং প্রফেসর এলেন উডওয়ার্ড। যুক্তরাজ্য
সরকারের সাইবার সিকিউরিটি ও কম্পিউটিং আইন নিয়েও কাজ করছেন তিনি। সম্প্রতি বিবিসিতে প্রকাশিত
হ্যাকিংয়ের ৭ ফাঁদ
প্রতিবেদনে তিনি হ্যাকারদের কৌশলগুলো তুলে ধরেন।
অসচেতনতা
একটু সচেতন না হলে তথ্যপ্রযুক্তির ভার্চুয়াল দুনিয়ায় আপনার নিয়ন্ত্রণ চলে যেতে পারে হ্যাকারদের কাছে। হয়তো কোথাও বেড়াতে যাবার আগে আপনি বদলে নেন আপনার সুটকেসের কম্বিনেশন লক নাম্বার কিন্তু সেই আপনিই হয়তো ইমেইল, ফেইসবুক বা এমন কোনো ওয়েবসাইটের পাসওয়ার্ড বিষয়ে উদাসীন।
কৌতুহল
জন্মসূত্রেই মানুষ কৌতুহলী। কোন ওয়েব সাইটে যদি লেখা থাকে “Do Not Press” সেখানেই মানুষ ক্লিক করে বেশি। এ ধরনের লিংকে ক্লিক করতেই আপনার ইন্টারনেট উপস্থিতির নিয়ন্ত্রন হ্যাকারদের কাছে চলে যাবার ভয় থাকে। ইন্টারনেটে লোভনীয় বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে তারা প্রভাবিত করে ব্যবহারকারীদের। এতে ক্লিক করলেই অনেক ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ চলে যায় হ্যাকারদের হাতে।
ছাড়
ছাড়ের কথা শুনলেই আমরা প্রায় সবাই একটু নড়েচড়ে বসি। এটা মানুষের সাধারণ আচরণের মধ্যেই একটি। লোভনীয় পণ্যে ছাড়ের কথা প্রকাশ হলেই তা নিয়ে শুরু হয় নানা অভিমত। অনুমান আর বাস্তবতার মধ্যে বিশাল ব্যবধান থাকায় প্রতারিত হন অনেকেই। বাস্তব অভিজ্ঞতার অভাবে অনেকেই এই ছাড়ের ফাঁদে পড়ে। অনেক সময় ভুয়া ছাড়ের বিজ্ঞাপনে বিভিন্ন কোম্পানির অফিসিয়াল লোগো ও ই-মেইল ঠিকানা ব্যবহার করা হয়। এতে মানুষ সাইবার অপরাধের শিকার হয়।
মিষ্টি কথায় ভোলা
আমরা শিশুদের শেখাই কিভাবে সুন্দর করে কথা বলতে হয়। কিন্তু অনলাইনে অপরিচিত কেউ যদি আপনার সঙ্গে মিষ্টি কথায় আলাপ জমায়, তা সেটি ইমেইল বা চ্যাট রুম যেখানেই হোক না কেন, সাবধান। ইন্টারনেটে আমরা যা কিছু ব্যবহার করি তার অধিকাংশই অপরিচিত ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সাথে হয়ে থাকে। আর অপরিচিতদের সঙ্গে আলাপে মিষ্টি কথায় ভুললেই বিপদ।
লোভনীয় ফাঁদ
ইন্টারনেটে কোন কিছুই ফ্রি নয়। ফ্রি ডাউনলোড করতে দেয়া সবকিছুর পেছনে কোনো না কোনো উদ্দেশ্য থাকে। অনেক সময় ভূয়া ডাউনলোড লিংকের কারণে ইউজার পড়ে যান বিপাকে। ফ্রি ডাউনলোড করতে গিয়ে অনেক সময় অজান্তে ম্যালওয়্যার ছড়ায় কম্পিউটারে। এটি কম্পিউটারের নিরাপত্তার বড় ধরণের হুমকি।
আত্মবিশ্বাসহীনতা
মানুষ সাধারণত নিজের আইডি অন্যের কাছে প্রকাশ করতে চায় না। কেউ যদি ইন্টারনেটে আইটি সাপোর্ট দেয়ার প্রস্তাব করে পাসওয়ার্ড চায় এতে সতর্ক থাকুন। এতে সার্ভারের নিয়ন্ত্রন হ্যাকারদের কাছে যাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায় তাছাড়া অনেক স্পর্শকাতর তথ্য ইন্টারনেটে প্রকাশ পায়। কেউ যাতে আপনার পাওয়ার্ড কোনো ভাবে অনুমান করতে পারে কি-না সেদিকে সতর্ক থাকুন।
অমনোযোগ
খুব কম মানুষই আছেন যারা ই-মেইলে কোন লিংক আসলে তা মনোযোগ সহকারে দেখেন। অযাচিত লিংকে ক্লিক করলেই ম্যালওয়্যার ছড়াতে পারে আপনার পিসিতে। ই-মেইলে নিজের নিরাপত্তার জন্য এসব লিংক চেক করে নিলে ক্ষতিকর প্রোগ্রাম থেকে রক্ষা পাবে আপনার পিসি।
হ্যাকিং সমস্যায় করনীয় ।
সাইবার সিকিউরিটির জন্য অ্যালেন উডওয়ার্ড দিয়েছেন ৩ পরামর্শ । এগুলোকে এবিসি হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এগুলো হচ্ছে :
হ্যাকিং সচেতনতায়
কোনো বিষয়ে অনুমান করবেন না।
কাউকে বিশ্বাস করবেন না। এবং
সবকিছু আগে যাচাই করে নিন।
ধন্যবাদান্তে,
হাসান ইমতি
অকপট
সত্য যেথা দ্বিধাশূন্য, মুক্ত যেথা বাক ।
তথ্যসুত্রঃ ইন্টারনেট ।
হাসান ইমতি
অকপট
সত্য যেথা দ্বিধাশূন্য, মুক্ত যেথা বাক ।
তথ্যসুত্রঃ ইন্টারনেট ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন