মঙ্গলবার, ১৬ জুলাই, ২০১৩

মাহে রমজান - জানার আছে অনেক কিছু ।


রোযার ফযিলত ও মর্তবা

 

আবু হুরায়রা রাঃ বলেন, রসূল সাঃ এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সওয়াবের নিয়তে রমযানের রোযা রাখবে, তার পূবের সগীরা গুনাহসমূহ মাফ করা হবে এবং যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সওয়াবের নিয়তে রমযানের রাত্রি ইবাদতে কাটাবে, তার পূর্বের গুনাহসমূহ মাফ করা হবেআর যে ঈমানের সাথে ও সওয়াবের নিয়তে ক্কদরের রাত্রি কাটাবে তার গুনাহসমূহ মাফ করা হবে। (বুখারী ও মুসলীম)

রসূল সাঃ এরশাদ করেছেন,আল্লাহ তায়ালা বলেন মানব সন্তানের নেক আমল বাড়ানো হয়ে থাকে প্রত্যেক নেক আমল দশ গুন থেকে সাতশত গুন পর্যন্ত ,কেবল রোযা ব্যতীত কারণ রোযা আমারই জন্য এবং আমিই তার প্রতিফল দান করব (যত ইচ্ছা তত)বান্দা আমারই জন্য আপন প্রবৃত্তি ও খানাপিনা ত্যাগ করেরোযাদারের জন্য দুইটি (প্রধান)আনন্দ রযেছেএকটি তার ইফতারের সময় এবং অপরটি বেহেস্তে আপন পরওয়ারদিগারের সাথে সাক্ষাত লাভের সময়নিশ্চয় রোযাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর নিকট মিশকের খুশবো অপেক্ষাও অধিক সুগন্ধময়রোযা হচ্ছে মানুষের জন্য দোযখের আগুন হতে রক্ষার ঢাল স্বরুপসুতরাং যখন তোমাদের কারও রোযার দিন আসে, সে যেন অশ্লীল কথা না বলেএবং অনর্থক শোরগোল না করেযদি কেউ তাকে গালি দেয় অথবা তার সাথে ঝগড়া করতে চায়, সে যেন বলে আমি একজন রোযাদার (বুখারীও মুসলীম)

 

রোযা মানব শরীরে কোন ক্ষতি করে না


মানব শরীরের উপর রোযার প্রভাব সম্পর্কে গবেষণায় প্রমানিত হয় যে, রোযার দ্বারা মানব শরীরের কোন ক্ষতি হয় না কেবল ওজন সামান্য কমে, তাও উল্লেখযোগ্য কিছুই নয়বরং শরীরের অতিরিক্ত মেদ কমাতে এইরুপ আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের খাদ্য নিয়ন্ত্রন তথা ডায়েট কন্ট্রোল অপেক্ষা বহুদিক দিয়ে শ্রেষ্টযারা মনে করে থাকে যে, রোযা দ্বারা,পেটের শূল বেদনা বৃদ্ধি পায় তাদের এই ধারনা নিতান্ত অবৈজ্ঞানিক কারন উপবাসে পাকস্থলীর এসিড কমে এবং খেলেই এটা বাড়েএই অতি কথাটা অনেক চিকিৎসকই চিন্তা না করে শূল বেদনা রোগীকে রোযা রাখতে নিষেধ করেন১৭ জন রোযাদারের পেটের রস পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে, যাদের পাকস্থলীতে এসিড খুব বেশী বা খুব কম, রোযার পরে তাদের এই উভয় দোষই সেরে গেছেএই গবেষণায় আরও প্রমাণিত হয় যে, যারা মনে করেন যে, রোযার দ্বারা রক্তের পটাশিয়াম কমে যায় এবং তাদের শরীরের ক্ষতি সাধন হয়, তাদের এই ধারণা ও অমূলককারন পটাশিয়াম কমার প্রতিক্রিয়া কম দেখা দিয়ে থাকে হৃদপিন্ডের উপর অথচ
১১ জন রোযাদারের হৃদপিন্ড অত্যাধুনিক ইলেক্ট্রোকার্ডিগ্রাম যন্ত্রের সাহায্যে ( রোযার পূর্বেও রোযা রাখার ২৫ দিন পর) পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে, রোযা দ্বারা এদের হৃদপিন্ডের ক্রিয়ার কোন ব্যতিক্রম ঘটেনি

হে আল্লাহ যেভাবে রোজা পালন করলে তুমি আমাদের উপর সন্তুষ্ট হবে আমাদের সবাইকে সেভাবে রমজানের রোযা পালন করার তৌফিক দান করুনআমীন

রোজা কাদের জন্য ফরজ

 

রোজা ৮ শ্রেণী মানুষের ওপর ফরজ

১. মুসলমান হওয়া মুসলিম ব্যক্তির জন্য রোজা রাখা ফরজরোজা কোন অমুসলিমের জন্য ফরজ নয়
২. বালেগ হওয়া নাবালগের ওপর রোজা ফরজ নয়, অর্থাৎ ১২ বৎসর বয়সের কম বয়স হলে রোজা ফরজ হবেনা
৩. সুস্থব্যক্তি হওয়া শারীরিক ভাবে অসুস্থ ব্যক্তির জন্য রোজা রাখার নিয়ম নাইতবে সাধারন অসুখ বিসুখ হলে যদি সে রোজা রাখার উপযোগী হয় তবে সে রোজা রাখতে পারবে
৪.সুস্থ মস্তিস্কের অধিকারী হওয়া পাগলের ওপর রোজা ফরজ নয়
৫.স্বাধীন হওয়া পরাধীন নয় এমন ব্যক্তি হওয়া
৬.সজ্ঞান হওয়া অর্থাৎ যিনি রোজা রাখবেন তিনি নিজ জ্ঞানে বা স্বেচ্ছায় আল্লাহর হুকুম পালন করবেন
 ৭.মুকিম হওয়া অর্থাৎ স্তায়ীবাসিন্দা হওয়ামুসাফিরের ওপর রোজা ফরজের ব্যপারে একটু ভিন্নতা আছেযেমন কষ্টসাধ্য ভ্রমন হলে পরবর্তীতে রোজা আদায়ের বিধান আছে আমি মনে করি বর্তমানে সফর অনেক আরামের সাথে করা যায় তাই সফর অবস্থায় একমাত্র কাহিল হয়ে না পড়লে রোজা রাখা উচিৎ
৮.তাহীরা অর্থাৎ পবিত্রতা হায়েজ-নেফাস মুক্ত হতে হবে

যাদের উপর রোযা ফরজ নাঃ দশ প্রকার মানুষের জন্য রোযা ফরজ না


১. কাফের বা অমুসলিমকারণ তারা ইবাদত করার যোগ্যতা রাখে নাইবাদত করলেও ইসলামের অবর্তমানে তা সহি হবে না, কবুলও হবে নাযদি কোন কাফের রমজানে ইসলাম গ্রহণ করে তবে পিছনের সিয়ামের কাজা আদায় করতে হবে না
 ২. অপ্রাপ্ত বয়স্কঅপ্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তি প্রাপ্ত বয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত তার সিয়াম পালন ফরজ নয়
৩. পাগলপাগল বলতে বুঝায় যার জ্ঞান-বুদ্ধি লোপ পেয়েছেযার কারণে ভাল-মন্দের মাঝে পার্থক্য করতে পারে নাএর জন্য সিয়াম পালন ফরজ নয়যেমন পূর্বের হাদিসে উলে¬খ করা হয়েছেপাগল যখনই সুস্থ হয়ে যাবে তখনই সে সিয়াম পালন শুরু করে দেবেযদি এমন হয় যে দিনের কিছু অংশ সে সুস্থ থাকে কিছু অংশ অসুস্থ তাহলে সুস্থ হওয়া মাত্রই সে পানাহার থেকে বিরত থাকবে সিয়াম পূর্ণ করবেপাগলামি শুরু হলেই তার সিয়াম ভঙ্গ হবে না, যদি না সে সিয়াম ভঙ্গের কোন কাজ করে
৪.অশীতিপর বৃদ্ধ যে ভাল-মন্দের পার্থক্য করতে পারে না এ ব্যক্তি যার বয়সের কারণে ভাল-মন্দ পার্থক্য করার অনুভূতি চলে গেছে সে শিশুর মতইশিশু যেমন শরিয়তের নির্দেশমুক্ত তেমনি সেওতবে অনুভূতি ফিরে আসলে সে পানাহার থেকে বিরত থাকবেযদি তার অবস্থা এমন হয় যে কখনো অনুভূতি আসে আবার কখনো চলে যায় তবে অনুভূতি থাকাকালীন সময়ে তার উপর সালাত, সিয়াম ফরজ হবে
৫.যে ব্যক্তি সিয়াম পালনের সামর্থ্য রাখে না এমন সামর্থ্যহীন অক্ষম ব্যক্তি যার সিয়াম পালনের সামর্থ্য ফিরে আসার সম্ভাবনা নেইযেমন অত্যধিক বৃদ্ধ অথবা এমন রোগী যার রোগ মুক্তির সম্ভাবনা নেইআল্লাহ্‌র কাছে আমরা এ ধরনের রোগ-ব্যাধি থেকে আশ্রয় চাইএ ধরনের লোকদের সিয়াম পালন জরুরি নয়কারণ সে এ কাজের সামর্থ্য রাখে না
৬.মুসাফিরমুসাফিরের জন্য সিয়াম পালন না করা জায়েজ আছেসফরকে যেন সিয়াম পালন না করার কৌশল হিসেবে ব্যবহার না করা হয়
৭.যে রোগী সুস্থ হওয়ার আশা রাখে
৮. যে নারীর মাসিক চলছেঋতুকালীন সময়ে নারীর জন্য সওম পালন জায়েজ নয় বরং নিষেধ
৯. গর্ভবতী ও দুগ্ধ দানকারী নারীযদি গর্ভবতী বা দুগ্ধ দানকারী নারী সিয়ামের কারণে তার নিজের বা সন্তানের ক্ষতির আশঙ্কা করে তবে সে সিয়াম ভঙ্গ করতে পারবেপরে নিরাপদ সময়ে সে সিয়ামের কাজা আদায় করে নিবে
১০. যে অন্যকে বাঁচাতে যেয়ে সিয়াম ভেঙে ফেলতে বাধ্য হয়যেমন কোন বিপদগ্রস্ত ব্যক্তি ; পানিতে পড়ে যাওয়া মানুষকে অথবা আগুনে নিপতিত ব্যক্তিকে কিংবা বাড়িঘর ধসে তার মাঝে আটকে পড়া মানুষকে উদ্ধার করতে যেয়ে সিয়াম ভঙ্গ করল

যে সকল কারনে রোযা ভঙ্গ হয়


রোযা স্মরণ থাকা অবস্থায় পানাহার করা কিংবা স্ত্রী সহবাস করাএতে কাযা ও কাফফারা (একাধারে দুই মাস রোযা রাখা) ওয়াজিব হয়
নাকে বা কানে তেল, ষধ ইত্যাদি প্রবেশ করানো
নস্যি গ্রহণ করা
ইচ্ছকৃতভাবে মুখ ভরে বমি করা
বমি আসার পর তা গিলে ফেলা
কুলি করার সময় বা যে কোন ভাবে পানি গলার ভিতরে ঢুকে পড়া
দাঁতে আটকে থাকা ছোলা বা তার চেয়ে বড় ধরনের খাদ্যকণা গিলে ফেলা
মুখে পান রেখে ঘুমিয়ে পড়া অবস্তায় সুবহে সাদেকের পর জাগ্রত হওয়া
ধুমপান করা
১০রাত্র মনে করে সুবহে সাদেকের পর সাহরী খাওয়া
১১সূর্যাস্তের পূর্বে সূর্য অস্তমিত হয়েছে ভেবে ইফতার করাএগুলোতে শুধু কাযা (যে কয়টা ভাংবে সে কয়টা পরবর্তিতে রাখতে হবে)ওয়াজিব হয় কাফফারা নয় কিনতু রোযা ভেঙ্গে যাওয়ার পর দিনের অবশিষ্ট সময় রোযাদারের ন্যায় পানাহার ইত্যাদি থেকে বিরত থাকা উচিৎ
  

যে সকল কারনে রোযা মাকরুহ হয়


মিথ্যা কথা বলা
গীবত বা চোগলখোরী করা
গালাগালি ও ঝগড়া ফাসাদ করা
সিনেমা দেখা বা অন্য কোন কবিরাহ গুনাহে লিপ্ত হওয়া
সারাদিন নাপাক অবস্থায় থাকা
রোযার কারনে অস্থিরতা বা কাতরতা প্রকাশ করা
কয়লা, মাজন, টুথ পাউডার, টুথ পেষ্ট বা গুল দিয়ে দাঁত মাজা
অনর্থক কোন জিনিস মুখের ভিতর দিয়ে রাখা
অহেতুক কোন জিনিস চিবানো বা চেখে দেখা
১০কুলি করার সময় গড়গড়া করা
১১নাকের ভিতর পানি টেনে নেয়া (কিন্তু সে পানি গলায় পৌছে গেলে রোযা ভেঙ্গে যাবে)
১২ইচ্ছকৃতভাবে মুখে থু থু জমা করে গিলে ফেলা
১৩ইচ্ছকৃতভাবে অল্প বমি করা

যে সকল কারনে রোযার ক্ষতি হয় না

 

ভুলক্রমে পানাহার করা
আতর সুগন্ধি ব্যবহার করা বা ফূল ইত্যাদির ঘ্রাণ নেওয়া
নিজ মুখের থু থু কফ গিলে ফেলা
মাথা ,শরীর বা মুখে তেল, ক্রিম ,লোশন ইত্যাদি ব্যবহার করা
ঠান্ডার জন্য গোসল করা
ঘুমে স্বপ্নদোষ হওয়া
মিসওয়াক করা
অনিচ্ছকৃতভাবে বমি হওয়া
চোখে ওষধ , সুরমা বা ড্রপ ব্যবহার করা
১০ইনজাকশন নেয়া( খুবই জরুরি হলে)
১১অনিচ্ছাকৃতভাবে গলায় মশা, মাছি, ধোঁয়া বা ধুলাবালি প্রবেশ করা
১২অনিচ্ছাকৃতভাবে কানে পানি প্রবেশ করা

ধন্যবাদান্তে, 

হাসান ইমতি

অকপট  
সত্য যেথা দ্বিধাশূন্য, মুক্ত যেথা বাক ।  

থ্যসুত্রঃ ইন্টারনেট ।     

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন