শুক্রবার, ১২ জুলাই, ২০১৩

আহলান সাহলান মাহে রমজান।

আহলান সাহলান মাহে রমজান। প্রতি বছরের মত এবারও পবিত্র রমজানুল মুবারক আমাদের মাঝে রহমত, মাগফেরাত ও নাজাতের বার্তা নিয়ে হাজির। রসূল (স.)এই রমজান মাস পাওয়ার জন্য প্রত্যেক বছর রজব মাস অর্থাত্ রমজানের দুই মাস পূর্ব হতে আল্লাহর কাছে দোয়া করতেন। সেই পবিত্র সুমহান মাসটিকে আমরা হূদয়ের সব উষ্ণতা দিয়ে জানাই স্বাগতম। আহ্লান সাহ্লান রমজান মুবারক, রমজান কারীম। রসূলুল্লাহর (স.) মক্কী জীবনের তের বছরে এই এক মাস রোজার প্রচলন ছিল না। দ্বিতীয় হিজরীর রমজান মাস হতে এটা ফরজ করে দিয়ে আল্লাহ ঘোষণা করেন, 'হে ঈমানদারগণ তোমাদের উপরে রোজাকে ফরজ করা হলো যেমনভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর ফরজ করা হয়েছিল। যাতে তোমরা মুত্তাকী বা পরহেজগার হতে পার' (সূরা বাক্বারা-১৮৩ আয়াত)। এর পর রসূল (স.) এই রোজা সম্বন্ধে সাহাবীদের অবহিত করার সময় বলেছিলেন, রমজান এমন একটি মাস যার মধ্যে একটি রাত রয়েছে, যা হাজার মাস হতেও উত্তম।

যে ব্যক্তি এ মাসে কোন একটি সত্কাজ করে তা সওয়াবের দিক দিয়ে অন্য মাসের একটি ফরজ কাজের সমতুল্য হয়ে থাকে। আর এ মাসে একটি ফরজ আদায় করলে তা হবে অন্য মাসের ৭০টি ফরজ আদায়ের সমতুল্য। এটা হলো ধৈর্য্যের মাস। আর ধৈর্য্য অবলম্বনের প্রতিদান হচ্ছে বেহেশ্ত। এটা পরোপকার ও সহানুভূতির মাস এবং ইহা এমন একটি মাস যাতে ঈমানদারগণের রিজিক বৃদ্ধি করা হয়ে থাকে। এ মাসে যে ব্যক্তি কোন রোজাদারকে ইফতার করায়, তার বিনিময়ে ঐ ব্যক্তির সমস্ত গুনাহ মাফ হয়ে যায় এবং সে জাহান্নাম হতে মুক্ত হয়। তাছাড়া সে উক্ত রোজাদার ব্যক্তির তুল্য সওয়াবও পাবে। তাতে অবশ্য উক্ত রোজাদারের সওয়াব একটুও কম করা হবে না।

এ মাসের প্রথম দশক রহমতের, দ্বিতীয় দশক ক্ষমার ও তৃতীয় দশক নাজাত বা জাহান্নাম হতে মুক্তির জন্য নির্ধারিত। যে ব্যক্তি এ মাসে স্বীয় চাকরের ওপর কার্যভার লাঘব করে, আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন এবং জাহান্নাম হতে মুক্ত করে দেন (বায়হাকী)। প্রিয় নবী (স.) বলেছেন, রমজান মাসের প্রথম রাত সমাগত হতেই শয়তান ও দুষ্টমতি জ্বিনগুলো শৃঙ্খলিত হয়। জাহান্নামের দরজাগুলো রুদ্ধ করে দেয়া হয়, যার একটি দরজাও খোলা থাকে না। আর বেহেশতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয়, যার একটি দরজাও বন্ধ থাকে না। আর কোন একজন গায়েবী আহ্বানকারী উচ্চৈস্বরে বলতে থাকেন যে, হে পুণ্যার্থীগণ্ল অগ্রসর হও! হে পাপাত্মার দল্ল তোমরা পিছিয়ে যাও! এই সময় আল্লাহর পক্ষ হতে বহু দোজখী মুক্তিপ্রাপ্ত হয়! এমনি করে প্রত্যেক রাতেই আহ্বান করা হয় (আহ্মদ, তিরমিজি ও ইবনে মাজাহ)।

নবী (স.) আরো বলেছেন, যে ব্যক্তি রমজান মাসে ঈমানের সাথে ও সওয়াবের আশায় রোজা রাখে, তার অতীত গোনাহ মাফ হয়ে যায়। আর যে ব্যক্তি এ মাসে ঈমানসহ সওয়াবের আশায় রাত জেগে (তারাবীহ্) নামাজ পড়ে, তার অতীত সকল গোনাহ মাফ করে দেয়া হয়। তাছাড়া যে ব্যক্তি শব-ই ক্বদর রাতে ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় রাত জেগে নামাজ পড়ে তারও অতীত সকল গোনাহ মাফ করে দেয়া হয় (বুখারী ও মুসলিম)।

নবী করিম (স.) বলেছেন, যে ব্যক্তি রোজা অবস্থায় মিথ্যা কথা ও মন্দ কাজ হতে বিরত থাকল না, তার উপবাসে আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই (বুখারী, তিরমিজি, ইবনে মাজাহ)। তিনি সাবধান করে বলেন যে, বহু রোজাদার এমনও রয়েছে, যারা ক্ষুধায় পিপাসায় কষ্ট পাওয়া ব্যতীত রোজা রাখার কোন ফল পায় না। এমনিভাবে বহু রাতজাগা নামাজী রয়েছে, যাদের রাত্রি জাগরণ ব্যতীত অন্য কোন লাভ হয় না (ইবনে মাজাহ)। নবী (স.)বলেন, 'আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, যে রোজাদারের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আমার নিষিদ্ধ বস্তুসমূহ হতে বিরত থাকল না, তার পানাহার পরিহারে আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই। সুতরাং প্রতীয়মান হয় যে, রমজান মাস হলো জান্নাত লাভের মাস। তাই পুরো রমজান মাস অধিক ইবাদত-বন্দেগী, জিকির-আজগার, কুরআন তেলাওয়াত, দান-সাদকা, তওবা-তাহলীলের মাধ্যমে আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে এগিয়ে যাই। আল্লাহ আমাদের সে তাওফিক দান করুন, আমীন।

ধন্যবাদান্তে, 

হাসান ইমতি

অকপট  
সত্য যেথা দ্বিধাশূন্য, মুক্ত যেথা বাক ।  

থ্যসুত্রঃ ইন্টারনেট ।  
 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন